ঠাঁই আসানসোল সংশোধনাগারের হাসপাতালে
আসানসোল : গরু পাচার মামলায় আগেই গ্রেফতার তাঁর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন যেখানে রয়েছেন, সেই আসানসোল জেলেই ১৪ দিনের জন্য ঠাঁই হল সিবিআইয়ের হাতে ধৃত অনুব্রত মণ্ডলের।
তবে অনুব্রতর শারীরিক সমস্যার কথা মাথায় রেখে তাঁকে জেলের ওয়ার্ডে না রেখে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জেল হাসপাতালে। আসানসোল জেলের হাসপাতালের দুটি ঘরের একটিতে রয়েছেন অনুব্রত। কিন্তু সমস্যা হল, গোটা আসানসোল জেল চত্বরেই কমোডওয়ালা কোনও শৌচাগার নেই। হাসপাতালের ঘর লাগোয়া শৌচাগার থাকলেও সেটি ভারতীয় ধাঁচের। শ্বাসকষ্ট ছাড়াও অনুব্রত তীব্র অর্শের সমস্যায় ভোগেন। ফলে ভারতীয় ধাঁচের শৌচাগারে তাঁর শারীরিক সমস্যা বাড়তে পারে বলে অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের আশঙ্কা।
এদিন সিবিআই আদালতে তাঁর শুনানির আগে কলকাতা থেকে আসানসোলে যাওয়ার সময় নিজের শরীর আগের চেয়ে অনেক ভাল আছে জানিয়ে অনুব্রত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা করেছেন, অনেক করেছেন।” নিজাম প্যালেস থেকে সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ বের করার সময় তিনি ছিলেন
আসানসোল জেলের হাসপাতালের একটি ঘরে রাখা হয়েছে অনুব্রতকে।
জেলে কমোডওয়ালা শৌচাগার না থাকায় উদ্বেগে অনুব্রতর ঘনিষ্ঠরা।
■ অনুব্রত এদিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা করেছেন, অনেক করেছেন।”
খোশমেজাজে। কলকাতা ছাড়ার মুখে জামিনের বিষয়ে কিছুটা আত্মবিশাসী দেখিয়েছিল তাঁকে। সিবিআইয়ের সামনেই তিনি 'প্রভাবশালী' তকমা নিয়ে বলেন, “এটা ওদের তোতাবুলি।” গরুপাচার মামলার তদন্ত বিজেপির তরফে বাংলার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি শুনে তাঁর একগাল হেসে মন্তব্য, “এরকম কোনও নিয়ম আছে নাকি ?
এটা হয় নাকি? বললেই হয়ে গেল, এত সোজা না !”
আদালতে শুনানির সময় আইনজীবীদের সওয়ালে। তাঁর আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় বিচারককে বলেন, “এটা একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে এবং মাইলেজ নিতে গরু পাচার মামলায় তদন্ত করা করা হচ্ছে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে। কেন্দ্রের শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনে সিবিআই এই তদন্ত করছে। কোনও নির্বাচন এলেই সিবিআই এটা করে।” সিবিআইয়ের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র এর পাল্টা জবাব দিতে গেলে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী বলেন, “রাজনীতির কথা এজলাসে না তোলাই ভাল।”
এদিন সিবিআই নতুন করে অনুব্রত মণ্ডলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার কোনও আবেদন করেনি। যদিও তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা জামিনের আবেদন করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, শারীরিক অবস্থা ও তদন্তের অগ্রগতি এবং গতিপ্রকৃতি । অন্যদিকে, সিবিআইয়ের জামিনের বিরোধিতা অন্যতম হাতিয়ার ছিল অনুব্রত
তাঁর বাঁধা সেই সুরই যেন ধরা পড়ল মণ্ডলের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি মণ্ডলের নাম এফআইআরে নেই। তার শুধু এনামুল হক ও সায়গল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল- এটা সিবিআই বলছে। স্মাগলিং মানে দেশের সীমান্ত পেরিয়ে কোনও কিছু পাচার করা। রাজ্যের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কোনও পশু নিয়ে যাওয়া পাচার বা স্মাগলিং নয়।
তার থেকে প্রভাবশালী তত্ত্ব। শেষ পর্যন্ত ঘণ্টাখানেকের সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। প্রসঙ্গত, এই গরু পাচার মামলায় আগেই গ্রেফতার হয়ে আসানসোল জেলে রয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেন। ফলে দু'জনের দেখা হবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এদিন শুনানির শুরুতেই অনুব্রতর আইনজীবী সন্দীপনবাবু বলেন, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গরু বা অন্য কোনও পশু নিয়ে যেতে আইনি বাধা নেই। তাই একটি পশুহাট থেকে গরু কেনার পর মুর্শিদাবাদে নিয়ে যেতে অসুবিধে নেই। সিবিআই আসল ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করছে না। ভারত- বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে কীভাবে বিএসএফের নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও নিয়ে যাওয়া হল গরু ? এখনও পর্যন্ত এই মামলায় একজনই বিএসএফের কমান্ড্যান্ট গ্রেফতার হয়েছিল। সতীশ কুমার নামে সেই অফিসার পরে ৩২ দিনের মাথায় জামিন পান। অনুব্রত
রাজনৈতিক দিক থেকে দিয়ে দেখলে তিনি সমস্ত আধিকারিকের কাছে পরিচিত। হতে পারে তার রাজনৈতিক দল সরকারে ক্ষমতায় আছে। তার মানে এই নয়, তিনি মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের ওপর প্রভাব ফেলবেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ঠিক নয়। সিওপিডি রয়েছে। তাঁকে ৪৮ ঘণ্টা পর পর জেরার জন্য। মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।
এরপর সিবিআইয়ের আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র বলেন, “সংগঠিতভাবে অনেক বড় অপরাধ হয়েছে। অনেকের যোগ রয়েছে। কীভাবে গরু পাচার হয়েছে? বিএসএফও জড়িত রয়েছে। পশু হাট থেকে জাল রসিদ ইস্যু করার কারণ কী? এনামুল হক এর মাস্টারমাইন্ড। মিডিয়েটর হচ্ছে বলেছেন।
সায়গল হোসেন। তিনি এর জন্য কেন টাকা সংগ্রহ করছিলেন? পশু কেনা হচ্ছিল সরকারি মেশিনারিকে ব্যবহার করে চোখে ধুলো দিতে। কোটি কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে অনুব্রত ও তাঁর মেয়ের নামে। আমরা প্রত্যেকটি পরীক্ষা করছি। তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। ডাক্তারকে চাপ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসককে সাদা পাতায় সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি একটি দলের জেলা প্রেসিডেন্ট। তাঁর প্রভাব প্রমাণিত।” পাল্টা সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় আবার বলেন, প্রভাবশালী মানেই কি জেলে রেখে দিতে হবে? নিজাম প্যালেসের বাইরে একটি বাড়ি ঠিক করে দেওয়া হোক। সেখান থেকে দরকার হলে তিনি প্রতিদিন যাবেন
শেষ পর্যন্ত বিচারক অনুব্রত মণ্ডলের জামিন নাকচ করে দেন। পরে আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, আমার মক্কেল সিওপিডি পেশেন্ট। জুডিশিয়াল কাস্টডিতে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ৩৭টি ওষুধ, ইনহেলার-সহ সব মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট দিতে হবে বলে বিচারক



