দাউদের মাথার দাম ২৫ লক্ষ
![]() |
| ডি কোম্পানির কোমর ভাঙতে মরিয়া এনআইএ |
ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড দাউদ ইব্রাহিম-সহ ডি কোম্পানির একাধিক সদস্যকে পাকড়াও করতে এ বার পুরস্কার ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। এই তালিকায় রয়েছেন দাউদের ডান হাত শাকিল মিয়া ওরফে ছোটা শাকিল, মুম্বই বিস্ফোরণের প্রধান চক্রী টাইগার মেমন, দাউদের ভাই আনিস ইব্রাহিম এবং জাভেদ চিকনার নামও।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা ১২৬৭ অনুযায়ী এনআইএ দাউদ ইব্রাহিম কাসকরকে 'গ্লোবাল টেররিস্ট' হিসেবে ঘোষণা করেছে বেশ কয়েক বছর আগে। ১৩-তে দেশ ছাড়েন দাউদ। তাঁর বয়স এখন ৬৬। এখনও তিনি দেশের 'কুখ্যাত' তালিকার এক নম্বরেই রয়েছেন। তাঁর অবৈধ ব্যবসার পোশাকি নাম 'ডি কোম্পানি'। ক্রিকেট জুয়া, জাল নোট, তোলাবাজির ব্যবসা করে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে কর্পোরেট সংস্থার আদলে। যেখানে সিইও-র ভূমিকা পালন করেন। ছোটা শাকিল। এই শাকিলের হদিশ পেতে এনআইএ বরাদ্দ করেছে কুড়ি লক্ষ টাকা। অন্য দিকে, ৫ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে ডি কোম্পানির আরও দুই সদস্য আনিস ইব্রাহিম ও জাভেদ চিকনার ক্ষেত্রে।
কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে ধরা পড়েন দাউদের ভাই ইব্রাহিম কাসকর। এর কিছুদিনের মধ্যে ডি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অপরাধে ইডি গ্রেপ্তার করে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিককে। এনআইএ তদন্তে নেমে জানতে পারে, মুম্বই, পুনে, ঠানে-সহ মহারাষ্ট্রের বেশ কিছু শহরে নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রোমোটর এবং ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা টাকা 'তোলা' হিসেবে আদায় করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তানের করাচিতে বসে থাকা দাউদ ইব্রাহিমের নির্দেশে ডি কোম্পানির সদস্যরা মহারাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের থেকে আদায় করা সেই টাকার একটা অংশ পাঠাচ্ছে পাক মদতপুষ্ট বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর কাছে। যাদের মূল কাজ সেই টাকায়
উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু অংশে স্লিপার সেলকে নতুন ভাবে সক্রিয় করে তোলা। সম্প্রতি জন্তু-কাশ্মীরে সক্রিয় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি কোথা থেকে আর্থিক মদত পাচ্ছে, তা খোঁজ করতে গিয়েও দাউদের সংস্থাই। এনআইএ ডি কোম্পানির যুক্ত থাকার হদিশ পায়।গোয়েন্দাদের সন্দেহ, পাকিস্তানে থাকলেও সেখানকার গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগসাজশে এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ড্রাগের বাজারে একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির দাউদ ইব্রাহিম। তাৎপর্যপূর্ণ
হলো, দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দারা 'টেরর ফান্ডিং সংক্রান্ত যে তদন্ত করছেন, তাতে উঠে এসেছে যে, জম্মু-কাশ্মীরের তরুণদের পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানোর কাজও করছে
গত কয়েক বছরে দাউদ সঙ্গীদের অনেকেই মুম্বই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূত্র তুলে দিয়েছেন গোয়েন্দাদের হাতে। এদের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ইজাজ লাকড়াওয়ালা।দাউদ ইব্রাহিমকে ধরতে ২৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা 'এনআইএ'র। দাউদ কোথায়, তা কি সত্যিই অজানা ?
১৯৯৩ থেকে ভারতের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' তালিকায় থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম কাসকরকে ধরিয়ে দিতে পারলে, কিংবা তার সম্পর্কে কোনও তথ্য দিলে মিলবে নগদ ২৫ লক্ষ টাকা! কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা 'এনআইএ'- যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংক্রান্ত ঘটনার তদন্ত করে থাকে, তাদের পক্ষ থেকে ঘোষিত হয়েছে এই নগদপ্রাপ্তির 'পুরস্কার'। একমাত্র কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বের এনডিএ সরকার ছাড়া বাকিদের কাছে এনআইএ-র এই ঘোষণা হালফিলের অন্যতম স্থূল রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রথমত, এই পুরস্কার ঘোষণা করে কেন্দ্র প্রমাণ করল, ভারত সরকার ছাড়া বাকি প্রত্যেকের জানার সমূহ সম্ভাবনা যে দাউদ কোথায়, কাদের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে আছে। দ্বিতীয়ত, সত্যিই কি ২৫ লক্ষ টাকা পুরস্কারের লোভে দাউদের মতো সন্ত্রাসবাদীকে ধরিয়ে দিতে মাঠে নেমে পড়বে লোকজন? আসলে, দাউদকে পাকড়াতে পুরস্কার ঘোষণা যে সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়া, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এনআইএ দাউদ ছাড়াও 'ডি' কোম্পানির আরও কয়েকজনকে ধরতেও পুরস্কার ঘোষণা করেছে। টাইগার মেননের জন্য পুরস্কার মূল্য ২০ লক্ষ টাকা এবং জাভেদ চিকনা ও আনিস ইব্রাহিমের জন্য পুরস্কার মূল্য ১৫ লক্ষ টাকা করে। এখানে প্রশ্ন উঠছে, দাউদ ও তার সঙ্গীদের ধরার জন্য এনআইএ-র ঘোষিত পুরস্কার মূল্য কি যথেষ্ট? দাউদ কি পারবে না এর দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে খেলা ঘুরিয়ে দিতে? কাজেই এনআইএ-র উদ্দেশ্যই অস্পষ্ট।১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণ, দেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র পাচারের ব্যবসা, জাল নোটের কারবারি-সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপে রয়েছে দাউদের হাত। মুম্বই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর থেকেই ভারত-ছাড়া দাউদ। শুধু ভারতেই নয়, আমেরিকারও ‘মোস্ট ওয়ান্টেড' তালিকাতেও সে। ২০০৩ সালে আমেরিকা দাউদের মাথার দাম ধার্য করেছে ২৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে ভারতের অনুরোধে ব্রিটিশ সরকার সে দেশে দাউদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে দাউদ। এই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা দাবি করেছিল, ভারতে ফের নাশকতার ছক কষেছে দাউদ। এমনকী, সেজন্য বিশেষ বাহিনীও তৈরি করা হয়েছে। দাউদের হিট লিস্টে রয়েছেন দেশের প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতা থেকে নামী শিল্পোদ্যোগীরা। এরপরেই কেন্দ্রীয় সরকার ও এনআইএ-র উপর স্বাভাবিকভাবেই চাপ তৈরি হয়েছে। সেই চাপ সামলাতে কি এই সহজ সমাধান? দাউদকে হাতেনাতে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার পাওয়ার আশা দেখানো ? কেন্দ্রের উচিত কূটনৈতিক স্তরে এর সমাধান করা, দাউদকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারব্যবস্থার সামনে দাঁড় করানো। সেই উদ্যোগ না দেখিয়ে তার মতো সন্ত্রাসবাদীকে ধরতে ২৫ লক্ষের পুরস্কার ঘোষণা তদন্তকারীদের শিশু সুলভ মনোভাবের পরিচায়ক নয় কি?
