মুখোমুখি... শুক্রবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মোদিকে মমতা: দ্রুত রাজ্যের বকেয়া মেটান
![]() |
| মোদি-মমতার |
হলুদ গোলাপের তোড়া ও বাংলা থেকে বিশেষ মিষ্টি নিয়ে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে লোককল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে মোদি-মমতার একান্তে বৈঠক। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ নির্ধারিত সময়সূচি মতোই সেখানে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর অফিস (পিএমও) থেকে দু'জনের বৈঠকের ছবিও প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে একটি চিঠি তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে জিএসটি বকেয়া সহ রাজ্যের সমস্ত বকেয়া দ্রুত মেটানোর আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, কোন খাতে কত টাকা বকেয়া রয়েছে তা বিস্তারিত তুলে ধরাহয়েছে।
“পশ্চিমবঙ্গে বিএসএফের টহলদারির এলাকা বৃদ্ধি নিয়ে আপত্তি রয়েছে তৃণমূলের। সেই বিষয়টিও এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থাপন করেছেন বলে খবর।”
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যের বকেয়া দ্রুত দিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি একাধিকবার আবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস গ্রামীণ জীবিকা এমজি এনআরইজিএ'র যোজনা, সংক্রান্ত মতো প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করার জন্য রাজ্যের বকেয়া অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়া উচিত বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে বিভিন্ন প্রকল্পের নামকরণ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের যে সংঘাত চলছে তার জেরে কার্যত থমকে বাংলা আবাস যোজনা ও সড়ক যোজনার কাজ। এই সব
বৈঠকের নির্যাস
■ প্রকল্পগুলি মিলিয়ে কেন্দ্রের কাছে ১ লক্ষ ৯৬৮ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। ১০০ দিনের কাজে বকেয়া ৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। ■ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বকেয়া ৯ হাজার ৩২৯ কোটি। ■ বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকতে পারে।
প্রকল্প পুনরায় যাতে রাজ্যে চালু করা হয় তার জন্যও দাবি জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এই স্কিমগুলিতে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ১৭ হাজার ১৯৬ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য প্রকল্পগুলি মিলিয়ে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছে ১ লক্ষ ১৬৮ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজ্যের বকেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের বিস্তারিত বকেয়ার যে হিসেব পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তাতে বলা হয়েছে— ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৯ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা, সমগ্র শিক্ষা মিশনে ১৫ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাবদ ৭৪৩ কোটি টাকা,
![]() |
| বকেয়ার সব হিসাব দিলেন মমতা! |
Hon'ble Chief Minister of WB and our Hon'ble Chairperson @MamataOfficial wrote to PM @narendramodi ji regarding funds due from the Central Government for various schemes.
This is increasing difficulties in the lives of our people and the Centre must clear all dues immediately!
রাজ্যের বকেয়া মেটান
মিড ডে মিলের জন্য ১৭৪ কোটি টাকা, স্বচ্ছ ভারত মিশনের খাতে ৩৪৪ কোটি টাকা, বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির দরুন ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ও ইয়াস দুর্যোগের পদে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪ হাজার ২২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। এর আগে ২০২১ সালের ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে বাংলায় পর্যাপ্ত করোনা ভ্যাকসিনের জোগান না থাকার বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন ও দ্রুত ভ্যাকসিন পাঠানোর দাবি জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তনের যে দাবি সংক্রান্ত আবেদনপত্র কেন্দ্রের ঘরে পড়ে রয়েছে তাতে দ্রুত অনুমোদনের আবেদনও জানানো হয়েছিল। এবারও জল্পনা ছিল- বৈঠকে রাজ্যের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরব হতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্র যেভাবে টাকা বন্ধ করে দিয়েছে ও তাতে গ্রামীণ রোজগারে যেভাবে প্রভাব পড়েছে সেজন্য এই প্রকল্পের বকেয়া টাকা দ্রুত রিলিজ করার দাবি জানাতে পারেন। সেই জল্পনা যে নির্ভুল ছিল তা এদিন মুখ্যমন্ত্রীর তরফে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া চিঠির বিষয়বস্তু থেকেই স্পষ্ট।
তবে, শুধু নিছক রাজ্যের বকেয়া দাবি-দাওয়া নয়, এই বৈঠকের নেপথ্যে রাজনৈতিক রণকৌশলও রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আজ ৬ আগস্ট উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। তার আগে প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে তারা। এমনিতেই এখনও বিরোধীদের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেনি তৃণমূল। ফলে বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে চর্চা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে তারা। চারদিনের কর্মসূচিতে দিল্লি সফরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সোজা চলে যান রাষ্ট্রপতি ভবনে। সেখানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। রাষ্ট্রপতির হাতে হলুদ গোলাপের তোড়া তুলে দিয়ে অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী। কাল ৭ আগস্ট রবিবার রয়েছে নীতি আয়োগের বৈঠক। সেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। এদিকে, আগামী ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে এবার 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব' উদযাপন করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে।




